সার্বভৌম সমাচার : "আমি বেঁচে আছি বলে সিনেমাটা করছিনা,আমি সিনেমাটা করছি বলে বেঁচে আছি" একাধিকবার তাঁর মুখে শোনা এই কথারও অবসান হল।বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা,অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
গত ৬ অক্টোবর কোভিড আক্রান্ত হয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র। চট্টোপাধ্যায়। তিন দিনের মধ্যেই অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইটিইউয়ে রাখতে হয়েছিল। ১৫ অক্টোবর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হলেও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে অবস্থার অবনতি হয় আবার।এইরকম উন্নতি অবনতির মন্দদশায় ৪০দিনের লড়াই শেষে ঘুমিয়ে পড়লেন তারকা।শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে।বেড়ে ওঠে হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা সাথেই বাড়তে থাকে হার্টরেট ও স্নায়বিক সমস্যা।শনিবার বিকেলেই ভয়াবহ অবস্থার পরিচয় দিয়ে দেয়।রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ তে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যুসংবাদ।
"আমার প্রথম নায়ক" জানালেন শর্মিলা ঠাকুর। ১৯৫৬ সালের ছবি ‘অপরাজিত’।তার পরেই ১৯৫৯তে "অপুর সংসার" ছবিতেই পরিচয়।তিনি আরো বললেন,"এমন একটা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব, যিনি একই সঙ্গে অভিনেতা, লেখক, কবি, চিত্রকর, সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিকার। কী নন! ফুটবল থেকে কবিতা, ক্রিকেট থেকে গিরিশ ঘোষ, যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, এমন মানুষের দেখা কমই পেয়েছি। মানিকদা, তপনবাবু, অসিতবরণ, অকালে চলে যাওয়া ঋতুপর্ণ আর অবশ্যই সৌমিত্র। আমাদের যে খুব নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এমন নয়। কিন্তু যখনই কথা হয়েছে, প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গে গড়িয়ে গিয়েছে আড্ডা। কারণ, সৌমিত্র ছিলেন সেই বিরল এক মানুষ, যিনি যে কোনও সময়ে যে কোনও বিষয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন।"
পর পর প্রচুর ছবিতে তাঁর চমক রেখে গেছেন অপুর সংসারের পর দেবী, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘ঝিন্দের বন্দী’ এবং ‘পুনশ্চ’ প্রমুখ।অর্ধ শতক পেরনো তাঁর কর্মজীবনে অভিনয় করেছেন কয়েক প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে। তাঁকে ভেবেই ‘অসুখ’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘হেমলক সোসাইটি’, গৌতম ঘোষের ‘দেখা’, সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’, অতনু ঘোষের ‘ময়ূরাক্ষী’, নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’ এবং ‘পোস্ত’।
১৯৯১সালে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পাওয়া।২০০৪ সালে পদ্মভূষণে সম্মানিত হন।২০০৬ সালে ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হন সৌমিত্র। ২০১২-এ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।তার কিছু বছর পর ফরাসি সরকারের দেওয়া সম্মান ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ এবং ‘কম্যান্দর দ্য লার্দ্র দে আর্ত্ এ দে লের্ত্র’।
সিনেমাজগতের পাশাপাশি নাট্যজগৎকেও উপহার দিয়েছেন তাঁর প্রযোজনায় 'জীবন’, ‘রাজকুমার’, ‘ফেরা’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘ঘটকবিদায়’, ‘ন্যায়মূর্তি’, ‘টিকটিকি’ ইত্যাদি নাটক।
কবিতা,থিয়েটার,সিনেমাজগতে তাঁর একাধিক কৃতিত্বের পর ৮৫বছর বয়সে জীবনাবসান হল এই মহান প্রতিভার।