এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা

এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা

সার্বভৌম সমাচার :   প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা চলছে। গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের পর থেকে মধ্যে দু’দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। একাধিক পর্যায়ের আলোচনার পরেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর তাদের সেনা বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভারতও অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলোতে সেনাবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। একইসময়ে, ভারতীয় সেনা জওয়ানদের উঁচু এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।  ভারতীয় বিমানবাহিনীও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। যেকোনও প্রকার চীনা দুঃসাহসকে জবাব দিতে নিরন্তর সেনা জওয়ানরা মোতায়েন রয়েছে।


আরও পড়ুন--

গণমাধ্যমে প্রকাশ, লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উভয়পক্ষের সেনাবাহিনী ‘এলএসি’র কাছে ট্যাঙ্ক, মেশিনগান এবং আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক, বিএমপি-২কে ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং যান, এম৭৭৭ আল্ট্রালাইট হাউৎজার বন্দুক, স্পাইক অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল, এনজিইভি লাইট মেশিনগান, টিআরজি স্নাইপার রাইফেলসকে এলএসিতে মোতায়েন করেছে। এর পাশাপাশি, বিমান হামলার জন্য সুখোই ৩০, মিগ ২৯, মিরাজ ২০০০, চিনুক এবং অ্যাপাচি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।


এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা

অন্যদিকে, সীমান্তে চীনা বাহিনীকে ১৫ লাইট ট্যাঙ্কস, ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকেলস, এএইচ ৪ হাউৎজার বন্দুক, এইচজে-১২  অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলস, এনএআর-৭৫১ লাইট   মেশিনগান, ডাব্লিউ-৮৫ ভারী মেশিনগান এবং অ্যান্টি-মেটেরিয়াল স্নাইপার রাইফেলস নিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে, ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে চীনা বাহিনীকে মোকাবিলা করতে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। চীন উত্তরের পাশাপাশি পূর্ব দিক দিয়েও তৎপরতা চালালে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উত্তরাখণ্ডে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী সরকারের কাছে এজন্য জমি চেয়েছে। 

কেন্দ্রীয় বিমান কমান্ড প্রধান, এয়ার মার্শাল রাজেশ কুমার ওই বিষয়ে গত শুক্রবার উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য জমি প্রয়োজনীয় জমি চেয়েছেন। তিনি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার ও পার্বত্য অঞ্চলে অবতরণের জন্য জমি সরবরাহের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চামোলি, পিথোরাগড় এবং  উত্তরকশিতে ওই সুবিধার ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে বিমানবাহিনীর ব্যাপক সুবিধা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের মতো সীমান্ত অঞ্চলে উপযুক্ত স্থানে রাডার ও এয়ার স্ট্রিপ সুবিধা থাকা প্রয়োজন।


এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরাখণ্ড একটি সেনা অধ্যুষিত রাজ্য। সেনাবাহিনীকে সম্মান প্রদান করা এখানকার বাসিন্দাদের একটি ঐতিহ্য। সামরিক কার্যক্রমের জন্য জমির সহজলভ্যতার জন্য সর্বদা রাজ্যের জনগণের সহযোগিতামূলক মনোভাব রয়েছে। রাজ্যে বিমানবাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভূমির ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হবে বলেও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ড রাজ্যে চীন ও নেপালের সীমান্ত রয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে আজ ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক  বলেন, ‘ভারত ও চীন উভয়েরই সমস্যা হল অর্থনৈতিক। ভারতের তুলনায় চীনের অর্থনীতি এখনও অনেক উন্নত। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদেরও অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা তো কহতব্য নয়। সরকারিভাবে মাইনাস ২৩.৯ শতাংশ জিডিপি। বেসরকারি মতে, মাইনাস ৪৭ শতাংশ জিডিপি। এই পরিস্থিতিতে দু’দেশের উচিত হচ্ছে শান্তি বজায় রাখা, সীমান্তরেখা মেনে চলা এবং পরস্পরকে আক্রমণ না করা ও উত্তেজনা না ছড়ানো। ভারতীয় জনগণের পক্ষে সেটা মঙ্গলজনক হবে।’


এলএসি বরাবর ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর-সজ্জা

ড. ইমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকার ভয়ে এখনও চীনের নাম করছেন না! একবার রাজনাথ সিং (প্রতিরক্ষা মন্ত্রী) করেছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের সীমান্তে কেউ দখল করে নেই। কিন্তু গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে চীন প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে। অবিলম্বে ওই সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান জরুরি।’

‘রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কখনও অস্ত্র দিয়ে হতে পারে না। অস্ত্র দিয়ে সমাধানের চেষ্টা জনগণের জন্য এবং ভারতের জন্য আত্মঘাতী হবে। চীনের পক্ষেও সেটা খুব মঙ্গলজনক হবে না’ বলেও ড. ইমানুল হক মন্তব্য করেন।

আরও দেখুন--

Post a Comment

Previous Post Next Post