‘CAA’ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনার, ভারতের প্রতিক্রিয়া


High Commissioner for Human Rights of the United Nations to the Supreme Court on the issue of 'CAA', India's response

সমাচার ওয়েব ডেস্ক : ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (‘সিএএ’) ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনার মিচেল বাচেলেট। তিনি এভাবে সুপ্রিম কোর্টে ‘সিএএ’ মামলায় আদালত-বান্ধব হিসাবে সামিল হতে চাওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওই আইন বিশ্বের প্রশ্নের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য ওই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে এক বিবৃতিতে এটি একান্তভাবেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং কোনও বিদেশিপক্ষের ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই বলে জানানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন ‘সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতীয় সংসদে ওই আইন পাশ হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, কোনও বিদেশিপক্ষের ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে নাক গলানোর অধিকার নেই।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে সিএএ-এর সাংবিধানিক বৈধতা রয়েছে। আমাদের সংবিধানের  মূল্যবোধের সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ। দেশভাগের বেদনার পরে মানবাধিকার সংক্রান্ত যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে বা প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেগুলোকে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদা দিই। দেশের স্বাধীন বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থায় আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে আমাদের শক্তিশালী এবং আইনানুগ অবস্থানে সুপ্রিম কোর্ট সায় দেবে।’

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে ‘সিএএ’ তে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে নিপীড়নের শিকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে প্রশংসা করলেও একইসঙ্গে ‘ ধর্মের ভিত্তিতে’ যে ভেদাভেদ করা হচ্ছে তা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কি না, তা দেখার বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, মুসলিমরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এলেও ভারতে কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না। কিন্তু আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু শিয়া, আহমদি  ও হাজারা সম্প্রদায় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।


High Commissioner for Human Rights of the United Nations to the Supreme Court on the issue of 'CAA', India's response

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনারের বক্তব্য, ভারতে আশ্রয় নেওয়া ওই সম্প্রদায়ভুক্তদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাঁরা পুনরায় নিপীড়নের মুখে পড়তে পারেন। এখানেই সব থেকে বড় আপত্তি জাতিসঙ্ঘের। কমিশনারের বক্তব্য, নিপীড়নের শিকার হবে জেনেও কাউকে তার দেশে ফেরত পাঠানোর উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জাতিসঙ্ঘের। ভারত এই সনদ মানতে দায়বদ্ধ।

এরআগে ভারত থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর মামলায় জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি সর্বোচ্চ আদালতে একইভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ না করে ওই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকেই দৃষ্টি রয়েছে বিশ্লেষকদের।

এব্যাপারে আজ বুধবার কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী আবদুল মাতীন প্রতিবেদককে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আমরা পড়াই। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশ্বব্যবস্থায় এটা হচ্ছে একে অপরের ওপরে নির্ভরশীল। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত যে চার্টার আছে তাতে প্রত্যেক দেশ সই করেছে। তাঁরা প্রত্যেক মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা, বাঁচার অধিকার এবং কোনও মানুষকে, কোনও গোষ্ঠীকে তাঁর ধর্মের ভিত্তিতে, জাতির ভিত্তিতে, লিঙ্গের ভিত্তিতে, জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না। সিএএ বিল গুরুতরভাবে তা লঙ্ঘন করেছে। এটা শুধু ভারতের সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে তা নয়, এটা প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মৌলিক নিয়মকেও লঙ্ঘন করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সংবিধান জাতিসঙ্ঘের বিরোধী নয়। এটা একে অপরের পরিপূরক। একে অপরকে সহায়তা করে। যেজন্য মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সুবিচার এটা কোনও দেশের কপিরাইটের আইন নয়। এটা একটা দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সংগ্রামের ফল। এটা হচ্ছে বিশ্বমান। বিশ্বমর্যাদায় যদি ভারতবর্ষ পিছিয়ে থাকে, ভারত যদি মানতে না চায় তাহলে সংবিধানও তার বিরুদ্ধে। এবং আন্তর্জাতিক সমাজ বা আন্তর্জাতিক কোর্ট বা আন্তর্জাতিক যে আইন আছে তারও বিরোধী। ফলে, এটা একটা গুরুতর সংকটের মুখেই যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত আশাবাদী যে সরকার এটা বুঝতে পারবে। কারণ, সরকারকে বিশ্বে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।’

‘আমরা যখন বিদেশ সফরে যাই তখন আমাদেরকে মানুষ প্রশ্ন করে যে, দেশে কী আইন তৈরি হচ্ছে? এরফলে ভারতের মাথা বিশ্বসমাজের কাছে অনেক হেঁট হয়ে যাচ্ছে। এরফলে সাংবিধানিক যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে’ বলেও অধ্যাপক আবদুল মাতীন মন্তব্য করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post